আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা: ভারত জানালো ‘গভীর দুঃখজনক,’ বাংলাদেশ বলছে পূর্বপরিকল্পিত

আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা: ভারত জানালো ‘গভীর দুঃখজনক,’ বাংলাদেশ বলছে পূর্বপরিকল্পিত








আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দিল ভারত

সোমবার দুপুরে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ সহিংসতায় রূপ নেয়। প্রতিবাদকারীদের একটি দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। এ সময় তারা ভাঙচুর চালায় এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে দেয়।

বিবৃতি দিল ভারত ও বাংলাদেশ সরকার

সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) এ ঘটনাকে “গভীরভাবে দুঃখজনক” বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তিতে হামলা করা উচিত নয়। সরকার বাংলাদেশ হাইকমিশন ও তাদের ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করছে।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এটি পরিকল্পিত হামলা বলে মনে হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশের দায়িত্ব ছিল এমন ঘটনা ঠেকানো। কিন্তু তারা সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি।”

বাংলাদেশ সরকার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।







প্রতিবাদের কারণ

হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীরা দাবি করেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলছে। তারা সদ্য গ্রেফতার হওয়া হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তিরও দাবি জানান।

জানা গেছে, প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ত্রিপুরা বিজেপির সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিকও উপস্থিত ছিলেন। তিনি দাবি করেন, “হিন্দুদের ওপর এমন হামলা আর সহ্য করা হবে না। নোবেলজয়ী মোহাম্মদ ইউনূস এসব ঘটনার পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন। তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার করা উচিত।”

প্রতিবাদের শুরুতে এটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট ছিল। কিন্তু পরে কিছু প্রতিবাদকারী “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিতে দিতে ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে।

ঘটনার বিবরণ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত থাকার সময়, বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীদের একটি দল মূল ফটক ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে এবং চেয়ার, ফুলের টবসহ বিভিন্ন সামগ্রী ভাঙচুর করে।

এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ শুরু করে। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। ত্রিপুরা পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (গোয়েন্দা) অনুরাগ ধ্যানকর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব

এই হামলার কারণে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, কোনো কূটনৈতিক মিশনে হামলা করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে গণ্য হয়।

বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, “এ ধরনের ঘটনা কূটনৈতিক সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য নীতিমালা লঙ্ঘন করে। ভারত সরকারের উচিত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।”

নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

এই ঘটনার পর বাংলাদেশ হাইকমিশন ও সহকারী হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, হাইকমিশনের আশপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

সংক্ষেপে

হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর বাংলাদেশে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সমাবেশ সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এটি কূটনৈতিক ও আইনি দিক থেকে গুরুত্ববহ একটি ঘটনা, যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ দুটির সম্পর্ক উন্নয়নের পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

Post a Comment

0 Comments